নিশিকান্ত ভূঞ্যাঃ- কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতে গেলে UGC এর নির্ধারিত যোগ্যতা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে কলেজে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ হয়ে গেল। তাতে UGC এর নির্ধারিত যোগ্যতা অধিকাংশ অতিথি শিক্ষকদের নেই। অথচ রাজ্যে NET, SET পাস ও p.hd ডিগ্রি প্রাপ্ত এবং UGC এর নিধারিত যোগ্যতামান রয়েছে হাজার হাজার উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীর। এইসব NET, SET পাস ও P.hd ডিগ্রি প্রাপ্তদের প্রতি কেন এই দ্বিচারিতা? মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে কি তাহলে উচ্চশিক্ষিত NET, SET পাস এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের কোন মূল্য নেই?
Is there any value in UGC’s prescribed qualifications for college professorship?
একজন ছাত্র বা ছাত্রী কঠোর পরিশ্রম করে উচ্চশিক্ষা লাভ করে, NET , SET পাস করল এবং পি এইচ ডি ডিগ্রি করল। এই সমস্ত যোগ্যতা সম্পন্ন উচ্চশিক্ষিত যুবক যুবতী থাকা সত্ত্বেও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি করে অধিকাংশ অযোগ্য অতিথি শিক্ষকদের কলেজে অধ্যাপনার জন্য স্থায়ীকরন করলেন? উচ্চশিক্ষা দপ্তর নিজেই স্বীকার করেছে যে, অনেক অতিথি শিক্ষকদের UGC এর নিধারিত যোগ্যতা নেই। উচ্চশিক্ষা দপ্তর এও স্বীকার করেছে যে, অনেক কলেজে সঠিক পথে ও সঠিক ভাবে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।
আবার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কি করে এই সব অযোগ্য অতিথি শিক্ষকদের কলেজে স্থায়ীকরন করলেন। তাহলে কি মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলেজেও একদল দলদাস করার চেষ্টা করলেন? এত যেন জঙ্গল রাজ চলছে। জোর যার মুল্লুক তার এর মতো অবস্থা অর্থাৎ মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তাই তিনি যা মনে করবেন এবং যা ইচ্ছা হবে তাই করবেন। এটা তো তাহলে একনায়কতন্ত্রের প্রতিফলন বলা যেতে পারে। তাহলে মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবিলম্বে ঘোষণা করা উচিত যে, পশ্চিমবঙ্গে কলেজে অধ্যাপনা করতে হলে ইউ জি সি এর নিয়ম নীতি মানা হবে না।
একটা কথা ভাবতে অবাক লাগে যে, রাজ্যের উচ্চশিক্ষার উপর দিনের-পর-দিন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঘাত করছেন এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করার চেষ্টা করছেন। সেই রাজ্যের অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তামাশা দেখছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিবাদের ভাষা কি হারিয়ে গেছে? বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচ্চশিক্ষা ধ্বংসের নীতিকে সমর্থন করছেন ? তাহলে কি বুঝতে হবে বিরোধী সমস্ত দলগুলি উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তিত নয় ? বেআইনি SACT নিয়োগ নিয়ে বিরোধী দলগুলি তাদের অবস্থান অবিলম্বে স্পষ্ট করুক।
বর্তমান রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি উঠে এসেছে এবং তার বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলিপ ঘোষ। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাননীয় সাংসদ ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলিপ ঘোষ বেআইনি SACT এর নিয়োগ নিয়ে এখনো পর্যন্ত অবস্থান স্পষ্ট করেননি। তাহলে আমরা কী ধরে নেব বিজেপি উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তিত নয়? তবে বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, বিজেপির নেতা দেবজিত সরকার এবং রাজনীতিবিদ সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বেআইনি SACT নিয়োগ নিয়ে মুখ খুলেছেন। তবে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এখনো পর্যন্ত বেআইনি SACT নিয়োগ নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেননি বিজেপি।
গনতন্ত্রে বিরোধী দলগুলোর ভূমিকা অন্তত গুরুত্বপূর্ন। বিজেপি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল অথচ বেআইনি SACT নিয়োগ নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। এটা অন্তত হাস্যকর। অপরপক্ষে বাম দলগুলো SACT এর নিয়োগের পক্ষে কারণ মাননীয় সুজন চক্রবর্তী একদা SACT এর স্বার্থে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন। তাছাড়া কলেজে যোগ্যতাহীন পার্টটাইম নিয়োগ শুরু তো বাম আমলেই । তাই বামেদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা বৃথা।
অপরপক্ষে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বেআইনি SACT নিয়োগ নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও রাজ্য কংগ্রেসের সংগঠন তলানিতে ঠেকেছে। কিন্তু যে বিজেপি দল নিজেদের পশ্চিমবঙ্গে 2021 এর বিধানসভা দখলের স্বপ্ন দেখেন। সেই দলই বেআইনি SACT নিয়োগ নিয়ে এখনো পর্যন্ত অবস্থান স্পষ্ট করেননি। যে দল উচ্চশিক্ষার বিষয়ে চিন্তিত নয়, সেই দল পশ্চিমবঙ্গের কতটা ভালো করবে তা বোঝা যাচ্ছে।
যাইহোক তৃণমূল থেকে শুরু করে বিজেপি, বাম-কংগ্রেস প্রত্যেকটি দলই রাজনীতিতে ব্যস্ত। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রত্যেকটি দল কিভাবে ক্ষমতা দখল করা যাবে সেই নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষা হলো জাতীয় শক্তি। শিক্ষক হলেন জাতি গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষার উপর বারবার আঘাত এলেও কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো যায় আসে না। তাই সমস্ত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের শিক্ষিত সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
সকল খবর সবার আগে ফেসবুকে ফ্রী পেতে চাইলে আমাদের পেজ লাইক করুন। Click Here..
For Latest Update Follow Us on