নিশিকান্ত ভূঞ্যাঃ- দীর্ঘদিন ধরে আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। হাজার হাজার উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন বেকার যুবক-যুবতীরা বেকারত্বের জ্বালায় হতাশায় ভুগছে। এমতাবস্থায় মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিয়ে, কলেজের অতিথি শিক্ষকদের স্থায়ীকরন করলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, 19 শে আগস্ট 2019 তারিখে হাওড়ার এক প্রশাসনিক সভা থেকে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কলেজের অস্থায়ী অধ্যাপকদের স্থায়ীকরণ করার মৌখিক ঘোষণা করেন এবং সেই মতো 23 শে ডিসেম্বর 2019 তারিখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তর একটা নোটিশ জারি করে। এই নোটিশে জানানো হয় রাজ্যের সমস্ত কলেজ গুলোতে কর্মরত অস্থায়ী শিক্ষকদের 60 বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ীকরণ করা হবে। সেই নোটিশের দ্বিতীয় পয়েন্টে এটাও বলা হয়, যে সমস্ত অস্থায়ী শিক্ষকদের কলেজে পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই তাদেরও 60 বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ীকরণ করা হবে।
ঠিক এখানেই উঠছে প্রশ্ন, যে সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তর 2019 এর জুলাই মাসে নোটিশ দিয়ে জানায় সরকার পোষিত কলেজে অতিথি শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ম মেনে হচ্ছে না, সেই দপ্তরই ডিসেম্বর মাসে কী করে বলে অতিথি শিক্ষকদের 60 বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ীকরণ করা হবে? এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুঘলকি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যে কয়েক হাজার NET, SET, পাস করা এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত যোগ্যতাসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে। সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি রাস্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের জন্য প্রতিবাদে সবর USRESA নামক সংগঠন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে আজ ইউজিসি নির্ধারিত যোগ্যতা সম্পন্ন উচ্চ শিক্ষিত যুবক যুবতীরা রাস্তায় ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলন করছে। অপরদিকে ইউজিসি নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কলেজের অতিথি শিক্ষকদের স্থায়ীকরনের মাধ্যমে একদল অনুগত দলদাস অধ্যাপক/অধ্যাপিকা তৈরি করলেন মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ?
যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচ্চশিক্ষা দপ্তর নিজেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় যে, কলেজে সঠিক পদ্ধতিতে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কিভাবে প্রায় 14000 কলেজের অতিথি অধ্যাপকদের স্থায়ীকরন করলেন?? যার মধ্যে অনেক অতিথি শিক্ষকদের ইউজিসির নির্ধারিত যোগ্যতা নেই । এটা শিক্ষা দপ্তর নিজেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্বীকার করেন। তাহলে এখানেই প্রশ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি পশ্চিমবঙ্গে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন ? যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে ইউজিসি বা কলেজ সার্ভিস কমিশন এর প্রয়োজনীয়তা কতটা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠবে যে, মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাহলে নতুন করে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে নিয়ম করুন। তাতে করে উচ্চ শিক্ষিত যুবকযুবতীরা বুঝতে পারবেন কলেজে অধ্যাপনা করতে গেলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে। এতদিন পর্যন্ত U.G.C এর নির্ধারিত যোগ্যতামান অনুযায়ী কলেজ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কলেজে নিয়োগ হত।কিন্তু মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় U.G.C এর নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে একনায়কতন্ত্রের মতো অতিথি শিক্ষকদের স্থায়ীকরন করলেন।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একনায়কতন্ত্র ভাবে সরকার চালাতে চাইছেন ? এর বিরুদ্ধে NET, SET পাশ করা এবং পিএইচডি ডিগ্রী প্রাপ্ত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের সংগঠন United Students and Research Scholars Association (USRESA) কলকাতা উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে যা বর্তমানে ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারে তুঘলকি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে USRESA র সাধারণ সম্পাদক তথা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মহঃ জুবের আলম বলেন “সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এইরূপ হঠকারী সিদ্ধান্তে আজ রাজ্যের হাজার হাজার গবেষক এবং যোগ্যতাসম্পন্ন চাকুরীপ্রার্থীরা গভীর হতাশায় দিনযাপন করছেন | তিনি আরও বলেন এইভাবে যোগ্যতাহীনদের কলেজে পড়ানোর সুযোগ করে দিলে আগামীদিনে উচ্চশিক্ষার মানের অবনতি ঘটতে বাধ্য |”
এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপিকাগনকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। তার কারন কি? তবে কি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপিকাগন আজ অসহায়?
তবে মমতা সরকারের তুঘলকি কাজকর্মের জন্য সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন বুদ্ধিজীবি। এখন প্রশ্ন উঠছে তাহলে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপিকাগন কি আজ অসহায়? উনাদের শিক্ষার কি কোনো ব্যবহার দিক নেই? সরকারের তুঘলকি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো সাহস নেই? তাহলে কি সরকারের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলানো কি উনারা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন?
তবে বুদ্ধিজীবী ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপিকাগনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। কারণ উনারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ডিগ্রি ও বিভিন্ন পুরস্কার প্রাপক।
কিন্তু উনাদের শিক্ষার ব্যবহারিক দিক নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপিকাগন ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণা ও কলেজে অধ্যাপনার স্বপ্ন দেখান। সেই অধ্যাপক, অধ্যাপিকাগন আজ নিশ্চুপ। তাহলে কলেজ ও বিশ্বিবদ্যালয়ের অধ্যাপক/ অধ্যাপিকাগনের ছাত্রছাত্রীদের গবেষণা বা ভবিষ্যতে অধ্যাপনার স্বপ্ন দেখানো বন্ধ হোক। অধ্যাপক/ অধ্যাপিকাগনের সাথে ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্ক হলো গুরু শিষ্যের সম্পর্ক।যখন শিষ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে তখন প্রত্যেক গুরুর উচিত শিষ্যের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার সাহস যোগানো। কিন্তু বতর্মান পরিস্থিতিতে কি গুরুরা তাদের শিষ্যের বিপদে পাশে রয়েছেন??? গুরুরা কেন প্রতিবাদ করার জন্য এগিয়ে আসছেন না? এর উত্তর এখনও অধরা।
NET, SET পাস পিএইচডি প্রাপ্ত গবেষক এবং U.G.C নির্ধারিত কলেজের অধ্যাপনা করার মতো যোগত্য সম্পন্ন চাকুরীপ্রার্থীদের জন্য মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি পদক্ষেপ নেন তা দেখায় বিষয়। তবে কি মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উচ্চ শিক্ষিত যুবকযুবতীদের উচ্চ শিক্ষার মূল্য কি দেবেন? তার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক হাজার NET, SET পাস করা ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত উচ্চশিক্ষিত যুবক যুবতীরা।
সকল খবর সবার আগে ফেসবুকে ফ্রী পেতে চাইলে আমাদের পেজ লাইক করুন। Click Here..
আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের দাবীতে চাকুরিপ্রার্থীরা মাস্ক বিতরণ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করলেন !
For Latest Update Follow Us on