নিশিকান্ত ভূঞ্যাঃ- চন্দন বাঙাল নামে এক কলেজের অতিথি শিক্ষক বা SACT এর সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য বাঁকুড়ার বহু মানুষ পথে নামলেন। SACT দের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন একাংশ উচ্চ শিক্ষিত যুবক যুবতীরা। দেখা যাক ঘটনাটি কি ঘটেছে? পুরাতত্ত্ববিদ চিত্তরঞ্জন দাশ গুপ্তের মৃত্যু ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর মন্তব্য করেন চন্দন বাঙাল নামে এক SACT বা অতিথি শিক্ষক। প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন বাঁকুড়া জেলার মানুষেরা। এই নিয়ে অতিথি শিক্ষক বা SACT এর নামে মহকুমাশাসক ও বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ জানান বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়।
চিত্তরঞ্জন বাবুর পরিবারের সদস্য শিল্পী জগন্নাথ দাসগুপ্ত বলেন, “চিত্তরঞ্জন বাবুকে নিয়ে সমাজ মাধ্যমে কুরুচিকর মন্তব্যে রাঢ় বাংলার মানুষ আঘাত পেয়েছেন।” বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ” চন্দন আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র চাইতেন। চাকরির জন্য সুপারিশের আর্জি জানালেন। গুরুত্ব না দেওয়ায় তিনি সমাজ মাধ্যমে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করেন। ”
চন্দন বাবু বলেন, “যা লিখেছি সেই জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে অরবিন্দ বাবুর লেখা নিয়ে আমি আপত্তি তোলায় তিনি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছেন।”
এই অতিথি শিক্ষক এর ” আপত্তিকর “মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাংশ উচ্চশিক্ষিত যুবক যুবতীরা। ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের সংগঠন United and Research Scholars Association (USReSA) প্রেসিডেন্ট জয়দেব পাত্র বলেন, “স্যাক্টদের অধিকাংশই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত নয়। সামাজিক মূল্যবোধ বলতে তারা কিছু জানেনা। আজকের জনৈক স্যাক্টের কর্মকাণ্ড তাই প্রমাণ করে। শিক্ষাগত যোগ্যতায় ওরা যেমন নিম্নমানের তেমনি তাদের চিন্তাধারা আরো কুরুচিকর। কলেজগুলো থেকেই তো শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণার মনোবৃত্তি তৈরি হয়। বেশীরভাগ স্যাক্টের গবেষণার বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা নেই, তারা গবেষণা বিষয়ে ছাত্রদের কি শিক্ষা দেবে? কলেজগুলোতে ওরা কেমন করে ঢুকেছে তা আজ আর কারো অজানা নয়। এহেন শিক্ষক দিয়ে বাংলার কলেজগুলো চলবে কেমন করে? শুধুমাত্র ভোটের দিকে তাকিয়ে অনৈতিক ভাবে স্যাক্ট নিয়োগের ফলে কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যেও সামাজিক মূল্যবোধের পতন অনিবার্য। শুধু তাই নয় এমন নমুনা রয়েছে স্যাক্ট স্থায়ী ঘোষণার পর রাতারাতি কলেজগুলোর অতিথি অধ্যাপকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। যার নমুনা পাকুয়াহাট কলেজে গৌরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগের ফলে তদন্ত কমিশন বসিয়েছে। সময় থাকতে এই সমস্ত যোগ্যহীন এবং পিছনের দরজা দিয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত স্যাক্ট অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে সমাজের সকলস্তরের নাগরিকবৃন্দ রুখে দাঁড়ান এবং বাংলার উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন।”
জয়দেব পাত্র আরো বলেন, “স্যাক্টদের কেউই কলেজে পড়ানোর যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাচ্ছেন না। তাছাড়া স্যাক্ট ক্যাটাগরি-২, যাদের নেওয়া হচ্ছে তাদের ইউজিসি ও সিএসসি-র নিয়ম অনুযায়ী কলেজে পড়ানোর কোনোই যোগ্যতা নেই এবং ১৪০০০ মধ্যে এদের সংখ্যাই অধিক। কোন্ যোগ্যতা থাকলে তাকে স্যাক্ট ক্যাটাগরি-২ তে নেওয়া হচ্ছে সেটাও রাজ্য সরকার স্পষ্ট করেনি। ফলে এ নিয়ে রয়েছে বিরাট প্রশ্ন চিহ্ন।”
এই সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, স্যাক্ট নিয়োগের ফলে উচ্চশিক্ষার ভিত ধ্বংস হয়ে যাবে, শিক্ষার মানের প্রভূত অবনমন ঘটবে। এমনকি কলেজে পড়ানোর যাবতীয় যোগ্যতা যাদের রয়েছে সেইসমস্ত যোগ্য প্রার্থীরা কলেজের চাকরি থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ তাদের সিটগুলি অনৈতিক ও অসাংবিধানিকভাবে নিয়োগ পাওয়া এইসমস্ত স্যাক্টরা দখল করে বসে থাকবেন ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত।
আরও পড়ুন