মনোরোগ ও সরকারি উদাসীনতা

 

কমল দাশঃ-  গ্রামবাসীদের মানসিক অসুখের হদিস পেতে এ এন এম  বা অগজিলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফারি (Auxiliary Nursing Midwifery), আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্যভবন। আশাকর্মীদের যোগ্যতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই । কিন্তু কয়েকদিনের প্রশিক্ষণে আশাকর্মীরা মানসিক রোগের মতো একটি জটিল এবং সূক্ষ্ম বিষয় আয়ত্ত করে রোগ নির্ণয়ে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ের বাতাবরন তৈরি হয়েছে। মানসিক রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে এতো সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকে যে ক্রিনিক্যাল সাইকোলজির পাঠ ছাড়া কয়েকদিনের প্রশিক্ষণে তা চিনে ওঠা অন্ধের হাতি দর্শনের সামিল হয়ে উঠবে না তো! যেমন “মনখারাপ” এবং “ডিপ্রেশন” আপাত লক্ষণে একই রকম হলেও এদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। আবার “ডিসথ্যামিয়া”র সঙ্গে “ডিপ্রেশন” এর লক্ষণগত যথেষ্ট মিল থাকলেও দুটো আলাদা রোগ। এই ভাবে দেখলে দেখা যায় দুটো মনোরোগের লক্ষণের মধ্যে এতো সাদৃশ্য যে একটার সঙ্গে আর একটা মিলেমিশে থাকে। এখন প্রশ্ন হল মনোবিদ্যায় যথেষ্ট দক্ষতা ছাড়া, শুধু কয়েকদিনের প্রশিক্ষণে মনোরোগ নির্ণয় করা কার্যত কতটা সম্ভব তা ভেবে দেখা উচিত।

রোগ নির্ণয় করার পেছনে কি উদ্দেশ্য আছে তা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়নি। গ্রামের মানুষের কত শতাংশ মানসিক রোগে আক্রান্ত এটাই জানা যদি সরকারের উদ্দেশ্য হয় তাহলে এই প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সমাজকর্মীরা যথার্থই বলেছেন “নিছক রোগ নির্ণয়ে মানসিক রোগীদের কাঙ্ক্ষিত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়”। ২০১৭ সালে আমাদের দেশে Mental Health Care Act চালু হয়েছে। ১৯৮৭ সালের Mental Health Care Act কে ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সরকার এই আইন প্রণয় করে। আইনে স্পষ্টভাবে রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি রোগ নিরাময় নিশ্চিত করার নির্দেশ আছে। Mental Health Care Act এর সূচনায় বলা হয়েছে “An Act provide for mental healthcare and services for persons with mental illness and to protect,promote and fulfill the right of such persons during delivery of mental healthcare and services and for matters connected therewith or incidental thereto.”

Advertisement

আসলে মানসিক রোগ সম্পর্কে সমাজমানসে যে অসচেতনতা এবং অসূয়া বোধ কাজ করে সরকারি নীতিতে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো মনেরও অসুখ করতে পারে সেই সহজ সত্যকে হৃদয়ঙ্গম করা এখনও আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে হঠেনি। আর এই মানসিক প্রতিবন্ধকতার প্রতিফলন ঘটে স্বাস্থ্য অধিকর্তার বক্তব্যের মধ্যে। আশাকর্মীর বাড়তি কাজের চাপের প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদে তারা পরিবারের কোনো সদস্যের কথা বলতে ইচ্ছে না করা, ঘুম কম হওয়া, খেতে ইচ্ছে না করাকে অবসাদের লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করবেন এবং সেই মতো তাকে পরামর্শও দেবেন।

মনোবিদ্যার সাধারণ ছাত্রও জানে যে শুধু মন খারাপ, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা মানসিক অবসাদের কারণ নাও হতে পারে। অন্তত দু সপ্তাহ ধরে অত্যন্ত মন খারাপের সাথে আরো অসংখ্য লক্ষণ থাকলে অবসাদ বলা যেতে পারে। একমাত্র দক্ষ মনোবিশারদ ছাড়া এই লক্ষণ বোঝা খুবই দূরহ।আশাকর্মীদের পক্ষে সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে তা বোঝা খুব মুশস্কিল।

সরকারও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চরম উদাসীন। ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশের জন্য Mental Health Care Act চালু করেছে। তিন বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এই আইনটি কার্যকরী করেনি। অথচ অন্যান্য রাজ্য বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্যগুলি এই আইন বহুদিন আগেই চালু করে দিয়েছে। সুতরাং এ রাজ্যের মানুষের মানসিক রোগ আশাকর্মীরাই নির্ণয় করবেন তাতে বিস্মিত হওয়াটা বোধ হয় অনুচিত।

 

সকল খবর সবার আগে ফেসবুকে ফ্রী পেতে চাইলে আমাদের পেজ লাইক করুন। Click Here..

Advertisement

 

কলেজে অতিথি শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ কি মমতা সরকারের একনায়কতন্ত্র ? কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক/ অধ্যাপিকাগন কি আজ অসহায়? লিখছেন — নেট পাস ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এম.ফিল রত ছাত্র নিশিকান্ত ভূঞ্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *