ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গবেষণারত যোগ্যতাসম্পন্ন পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২৫,০০০ গবেষক ও অনেক শিক্ষাবিদ রাজ্যসরকারের হঠকারি সিদ্ধান্তে আশঙ্কিত। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজগুলোতে SACT বা State Aided College Teacher নামে SACT-I ও SACT-II শ্রেণীতে ভাগ করে প্রায় ১৪,০০০ কলেজ টিচার স্থায়ীভাবে নিয়োগ করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে SACT-II শ্রেণীটির কলেজে পড়ানোর ন্যুনতম যোগ্যতা নেই এবং এরাই শতকরা ৭০ ভাগ রয়েছে।
এমতাবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘোষণা ও অর্ডিন্যান্স জারিটি ছিল নিম্নরূপ-
গত ২০ শে আগস্ট ২০১৯ রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা দপ্তর ২৩ শে ডিসেম্বর ২০১৯ একটি বিজ্ঞপ্তি ( No-2018- Edn(CS)/10M-83/2019) প্রকাশ করে। যেখানে দেখা যাচ্ছে বিগত কয়েকবছরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজ গুলোতে UGC (University Grants Commission) এবং রাজ্যের CSC (College Service Commission) -র (UGC Letter no. F.10-1/2009(PS), February, 2010 এবং F.25-1/2018(Ps/MISC. Date 28.01.2019) নিয়ম বিধিকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে (Govt. of WB, Department of Higher Education. Order no. 1081/EH/0/CS/4A-44/2019, Date 13.07.2019) বিভিন্ন কলেজ ম্যানেজিং কমিটি যেসব স্বল্পকালীন অস্থায়ী অধ্যাপক (GL/PTT/CWTT) নিয়োগ করেছিল তাঁদের কোনরূপ যোগ্যতার পরীক্ষা নেওয়াই হয়নি। সম্প্রতি রাজ্যসরকার SACT নাম দিয়ে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁদের স্থায়ী করেছে এবং অবসরকালীন ৫ লক্ষ টাকা তাঁদের দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে। এঁদের সকলের কাগজপত্র যেমন ভেরিভিকেশন হয়নি তেমনি যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ দিয়ে ইণ্টারভিউএরও ব্যবস্থা হয়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে SACT অধ্যাপকদের বেতন বা ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে গবেষক ও শিক্ষাবিদদের তেমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি কিন্তু তাঁদের যোগ্যতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তর অভিযোগ যেমন সোসাল মিডিয়াগুলিতে ঘুরছে তেমনি বিভিন্ন দপ্তরে জমাও পড়েছে।
রাজ্য সরকার এইসব দাবীদাওয়ার কর্ণপাত না করায় গবেষকরা মিলে USReSA (United Students & Research Scholars Association) নামক ফোরাম গঠন করে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। কিন্তু COVID ’19 এর কারণে গবেষকরা যখন গৃহবন্দী, এই গৃহবন্দীর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকার SACTদের নিয়োগপত্র দিয়েছে। যদিও গবেষকরা মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে একটি মামলা করেছিলেন। সেই মামলার গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা গতকাল হয়েছে।
সংক্ষেপে UGC ও WBCSC এর সহকারী অধ্যাপকদের যোগ্যতা নিম্নরূপ
কলেজে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী – মাস্টার ডিগ্রি তে ৫৫% মার্কস (রিসার্ভ ক্যাটেগরি তে ৫% ছাড়), NET/SET আবশ্যিক, MPhil, Ph.D, Interview – কিন্তু অধিকাংশ SACT অধ্যাপকদের উক্ত যোগ্যতা নেই, বিশেষ করে SACT-II দের নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার গেজেটে নিজেরাই স্বীকার করেছে যে SACT-II যোগ্যতাহীন (Don’t have qualification)। গভর্ণর নমিনি ও এক্সপার্টদের নিয়ে গঠিত কমিটিও তাঁদের ইণ্টারভিউের ব্যবস্থাও করা হয়নি। একসময় উত্তরকন্যায় শিক্ষামন্ত্রী নিজেও ঘোষণা করেছিলেন অধিকাংশ SACT দের কলেজে পাঠদানে যোগ্যতা নেই।
গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের মহামান্য বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় রায় দিয়েছেন যে কেস সংক্রান্ত সমস্ত নথি উভয় কে চার সপ্তাহের মধ্যে কপি বুক আকারে জমা করতে হবে এবং SACT এর নিয়োগ এই মামলার চূড়ান্ত রায় এর উপর নির্ভরশীল থাকবে। USReSA-র পক্ষ থেকে কৌশুলি হিসেবে লড়ছেন B. Bhattacharya, A. Bose এবং C. Chatterjee.
USReSA-র পক্ষ থেকে সম্পাদক মহঃ জুবের আলম জানিয়েছেন যে তারা বিচার ব্যাবস্থার উপর সম্পূর্ণ আস্থাশীল। তাঁদের দাবি ন্যায্য বিচার পাবে এবং SACT বাতিল হবে। কারন তারা ন্যায় সংগত ভাবেই অভিযোগ জানিয়েছে এবং এই অনৈতিক নিয়োগের বিরুদ্ধে সমস্ত তথ্য মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল করেছে।
NET Qualified এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে M.phil রত ছাত্র নিশিকান্ত ভূঞ্যা বলেন,” বাবা ও মা দিনমজুরের কাজ করে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন কিন্তু এখন আমি B.A ও M.A তে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি এবং NET Qualified করেও গভীর হতাশার মধ্যে ভুগছি। কারন যেভাবে মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কলেজের অতিথি শিক্ষকদের স্থায়ীকরন করলেন তাতে করে আমার মতো উচ্চ শিক্ষিত ছাত্র ছাত্রী দের ভবিষ্যত একদিকে যেমন অন্ধকারে ঠেলে দিলেন তেমন উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিলেন। দীর্ঘদিন কঠোর পরিশ্রম করে নেট পাস করার পর ভেবেছিলাম কলেজে চাকরি করে বাবা ও মা এর মুখে হাঁসি ফুটাতে পারব। কিন্তু মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে অতিথি শিক্ষকদের স্থায়ীকরন করলেন। তাতে এখন ভবিষ্যত বলে কিছু দেখতে পাচ্ছি না। বেশিরভাগ কলেজে এক একটি বিভাগে এক বা দুজন অধ্যাপক বা অধ্যাপিকা আছেন কিন্তু সেখানে হয়তো দেখা যাবে ৫ জন বা ৬ জন অতিথি শিক্ষক আছেন। তাহলে ভবিষ্যতে কিভাবে কলেজে অধ্যাপক বা অধ্যাপিকা বেশি পরিমানে নিয়োগ করা হবে? তাছাড়া গত কলেজ সার্ভিস কমিশন এর মাধ্যমে অধ্যাপক ও অধ্যাপিকা নেওয়া হয়েছিল তাতে বেশিরভাগ বিষয়ে সিট সংখ্যা খুব কম ছিল। তাই খুব হতাশার মধ্যে দিন কাটছে। তবে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার উপর পূর্ণ মাত্রায় আস্থা আছে।”
আরও পড়ুন
Qualified research scholars should win this case.