SACT vs USRESA
কলেজ হল উচ্চশিক্ষার একটা অন্যতম বড়ো স্তম্ভ । উচ্চশিক্ষার প্রতি ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বা মানসিকতা তৈরিতে কলেজ বড়ো ভূমিকা পালন করে । তাই বলাই যায় কলেজ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ছাত্র-ছাত্রীদের শুধুমাত্র জ্ঞানভাণ্ডারই বিকশিত করে না, তাঁদের ভবিষ্যত পরিকল্পনাতেও বহুলাংশে সাহায্য করে । কলেজকে তাই উন্নত সমাজ গঠনের অন্যতম স্তম্ভও বলা যেতে পারে ।
পশ্চিমবঙ্গের এহেন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নামে কী চলছে তা সকলের সম্মুখে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে । রাজ্যের কলেজগুলোতে পূর্ণ সময়ের শিক্ষকের অভাব (যোগ্য প্রার্থী থাকলেও হাতা গোনা কয়েকজনকে চাকরি দেওয়া হয়) একটা দীর্ঘকালীন সমস্যা । সেই সমস্যার সাময়িক সমাধানের উদ্দেশ্যে কলেজগুলো নিজেদের মতো করে অস্থায়ী অধ্যাপক বা অতিথি অধ্যাপক নিয়োগ করে । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তর বিগত 23 শে ডিসেম্বর 2019 তারিখে একটি সরকারি ঘোষণায় জানায় রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও সরকার পোষিত কলেজের অস্থায়ী বা অতিথি অধ্যাপকদের 60 বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ীকরণ করা হবে এবং তাঁদের State Aided College Teacher বা SACT নামকরণও করা হয় ।
আরও পড়ুন
আগামীকাল কলেজের অতিথি শিক্ষকদের মামলার শুনানি ! তবে কি গবেষক ও যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীদের জয়লাভ ?
এখন প্রশ্ন হল এতে সমস্যা কোথায়……………………….? সমস্যাটা বুঝতে হলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের দুটো নোটিশের ওপর নজর দিতে হবে । 13 জুলাই 2019 তারিখে উচ্চশিক্ষা দপ্তর একটি নোটিশ জারি করে এবং সেই নোটিশে তারা জানায় রাজ্যের সরকার পোষিত কলেজগুলো UGC ও CSC-র সঠিক পদ্ধতি এবং নিয়মনীতি না মেনেই অতিথি অধ্যাপক নিয়োগ করে চলেছে । এই প্রসঙ্গে তারা কলেজগুলোকে আর নতুন করে অতিথি অধ্যাপক নিয়োগ না করার অর্ডার দেয় ।
এর অর্থ হল, কলেজগুলো যেভাবে অতিথি অধ্যাপক নিয়োগ করেছে তাতে নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়মনীতি সঠিকভাবে মানা হয়নি । এরপর 19 শে আগস্ট 2019 তারিখে হাওড়ার এক প্রশাসনিক সভা থেকে রাজ্যের মাননীয়া মুখমন্ত্রী কলেজের অস্থায়ী অধ্যাপকদের স্থায়ীকরণ করার মৌখিক ঘোষণা করেন এবং সেইমতো 23 শে ডিসেম্বর 2019 তারিখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তর একটা নোটিশ জারি করে । এই নোটিশে জানানো হয় রাজ্যের সমস্ত কলেজগুলোতে কর্মরত অস্থায়ী শিক্ষকদের 60 বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ীকরণ করা হবে । সেই নোটিশের দ্বিতীয় পয়েন্টে এটাও বলা হয়, যে সমস্ত অস্থায়ী শিক্ষকদের কলেজে পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই তাদেরও 60 বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ীকরণ করা হবে ।
ঠিক এখানেই উঠছে প্রশ্ন, যে সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তর 2019 এর জুলাই মাসে নোটিশ দিয়ে জানায় সরকার পোষিত কলেজে অতিথি শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ম মেনে হচ্ছে না, সেই দপ্তরই ডিসেম্বর মাসে কী করে বলে অতিথি শিক্ষকদের 60 বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ীকরণ করা হবে! শুধু তাই নয়, যাদের কলেজে পড়ানোর ন্যূনতম যোগ্যতাই নেই, তাঁদেরও 60 বছর পর্যন্ত স্থায়ী করা হবে এটা কী করে ঘোষণা করে! যাদের কলেজে পড়ানোর ন্যূনতম যোগ্যতা নেই তাদেরকে কলেজগুলো কী করে নিয়োগ করে অতিথি শিক্ষক হিসেবে? এটা কি দ্বিচারিতা নয়? এই মুহূর্তে রাজ্যে কলেজে পড়ানোর মতো যোগ্যতাসম্পন্ন প্রায় 30000 বেকার যুবক যুবতী রয়েছেন, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত কি সেই সমস্ত যোগ্যতাসম্পন্নদের প্রতি অন্যায় নয়? এই প্রশ্নগুলো রইলো পশ্চিমবঙ্গের আপামর জনসাধারণের কাছে । এই বিষয়ে United Students and Research Scholars Association (USRESA) কলকাতা উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে যা বর্তমানে ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন ।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে USRESA র সাধারণ সম্পাদক তথা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মহঃ জুবের আলম বলেন “সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এইরূপ হঠকারী সিদ্ধান্তে আজ রাজ্যের হাজার হাজার গবেষক এবং যোগ্যতাসম্পন্ন চাকুরীপ্রার্থীরা গভীর হতাশায় দিনযাপন করছেন । তিনি আরও বলেন এইভাবে যোগ্যতাহীনদের কলেজে পড়ানোর সুযোগ করে দিলে আগামীদিনে উচ্চশিক্ষার মানের অবনতি ঘটতে বাধ্য ।”
(উপরোক্ত সমগ্র বক্তব্যটি USRESA র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে । এর জন্য নিউজ পোর্টাল কোনভাবেই দায়ী নয়।)
আরও পড়ুন