বাপন বিশ্বাসঃ- সুপ্রিয় পাঠক সমাজকে আন্তরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করি এবং শিক্ষক সমাজকে আমার দণ্ডবৎ প্রণামও শ্রদ্ধা। শিক্ষক ছাড়া যোগ্য সমাজ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জীবন কল্পনাতীত। শিক্ষক শিক্ষার্থীর স্বচ্ছন্দ ও সহজ বিকাশের সহায়ক এবং পথপ্রদর্শক। তিনি ছাত্র-ছাত্রীকে একজন ভালো মানুষ হতে শেখায়। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর আজ 5-ই সেপ্টেম্বর,2020 তাঁর 113 তম শুভ জন্মদিন। তাঁর চরণে আমার শতকোটি প্রণামও শ্রদ্ধার্ঘ । পাশাপাশি আজ মাদার টেরেসার প্রয়ান দিবস। তাঁর কর্মকাণ্ডের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।
teachers day o radhakrishnan
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত শান্ত ও মেধাবী ছিলেন। 1905 সালে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। যদিও দর্শন তার পছন্দের বিষয় ছিল না। নিম্নবিত্ত পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা এবং দুঃসম্পর্কের এক দাদার দর্শনের বই পাবেন বলে দর্শন বিষয়ে তার পড়াশোনা।যদিও তাঁর বাবা চাইতেন তিনি পূজারী হন।
মেধাবী ছাত্র রাধাকৃষ্ণন স্কুলজীবনে অসংখ্য স্কলারশিপ পেয়েছেন। প্রথমে ভেলোরের ভুরহি কলেজে ভর্তি হলেও, পরে মাদ্রাজ ক্রিশ্চান কলেজে ভর্তি হন তিনি। তাঁর বিষয় ছিল দর্শন। কিন্তু দর্শন তাঁর প্রথম পছন্দের বিষয় ছিল না। বই কেনার টাকা ছিল না রাধাকৃষ্ণনের। কিন্তু সেই সময়েই একই কলেজ থেকে দর্শন নিয়ে স্নাতক হন তাঁর এক দাদা। দাদার বইয়ের জন্যই দর্শনকেই বেছে নেন তিনি। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে বিশ্বের দরবারে অতি জনপ্রিয় দার্শনিক অধ্যাপক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
ড:রাধাকৃষ্ণানের বয়স যখন ষোল তখন শিবকামুকে তিনি বিবাহ করেন। তাঁর ছয় সন্তানের পাঁচটি ছিল মেয়ে এবং একটি ছিল পুত্র। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইউনেস্কোতে ভারতের দূত হয়েছিলেন। তাঁর পেশা ছিল রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, অধ্যাপক। 1931 সালে নাইটহুড এবং 1954 সালে ভারতরত্ন সম্মান পান। তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক রচনা করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন-1918″। তিনি দেশ-বিদেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তাঁর গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধুরা( তাঁর) জন্মদিন পালন করতে চাইলে, তিনি বলেন জন্মদিনের পরিবর্তে, 5-ই সেপ্টেম্বর যদি”শিক্ষক দিবস” উদযাপিত হয় তবে আমি বিশেষরূপে অনুগ্রহ লাভ করব বা কৃতজ্ঞ থাকব। সেই থেকেই আমাদের দেশে পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবস ।যদিও সারাবিশ্বে 5-ই অক্টোবর,28- ফেব্রুয়ারি এবং ভারতবর্ষ ও নেপালের হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রথাগতভাবে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা গুরু/ শিক্ষকদের মঙ্গলকামনায় নিবেদিত।1962 সাল থেকে 5-ই সেপ্টেম্বর ভারতের “শিক্ষক দিবস” পালিত হয়ে আসছে।
ড: রাধাকৃষ্ণান ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার উদ্দেশ্যে যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিলেন, তারপর তাঁর গুণমুগ্ধ পড়ুয়ারা ফুল সজ্জিত গাড়ির ব্যবস্থা করে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দিলেন।
ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের কার্যকালে দুটি যুদ্ধ-1962 এবং 1965 হয়েছিল এবং তাঁরই কার্যকালের মধ্যেই ভারতবর্ষের দুই বলিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যু হয়।
ডঃ রাধাকৃষ্ণনের সমালোচকরা সমালোচনা করলেও, ইন্ডিয়াটুডে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি লেখায়, প্রাক্তন বিদেশ মন্ত্রী কে. নটবর সিংহ বলেছিলেন-” রাধাকৃষ্ণাণ এর মুখে নিজের বিরোধিতা মেনে নিতে পারেননি ইন্দিরা গান্ধী। তাই 1967 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ হারান ড: রাধাকৃষ্ণন…”। দশ বছর দেশের উপরাষ্ট্রপতি থাকার পর ১৯৬২-তে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন রাধাকৃষ্ণন। নোবেলজয়ী ব্রিটিশ দার্শনিক, বারট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন, “ড. রাধাকৃষ্ণন ভারতের রাষ্ট্রপতি হওয়া মানে দর্শন বিষয়টার কাছে একটা আলাদা সম্মানের। আমি নিজে দার্শনিক, তাই আমি গর্বিত।”
ড: রাধাকৃষ্ণাণ 1975 এর 17-ই এপ্রিল তাঁর বর্ণময় জীবনের অবসান ঘটে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। প্রণাম সমস্ত শিক্ষক মহাশয়কে শিক্ষক দিবসে।
সকল খবর সবার আগে ফেসবুকে ফ্রী পেতে চাইলে আমাদের পেজ লাইক করুন। Click Here..
আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের দাবীতে চাকুরিপ্রার্থীরা মাস্ক বিতরণ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করলেন !