করোনার ভাইরাসের প্রকোপের ফলে দিনে দিনে সাধারণ মানুষের রুজি রোজগারের পথ ক্রমশ সংকীর্ণ হচ্ছে। এমতাবস্থায় উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবকদের হতাশা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তাদের বিভিন্ন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলন করতে দেখা গিয়েছে। কখন তারা শিক্ষামন্ত্রীর ফেসবুক ওয়ালে আবার কখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ফেসবুক ওয়ালে তাদের দাবী গুলি বারবার জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি।এমতাবস্থায় তারা এখন বিরোধী সাংসদ, , নেতাদের দারস্থ হলেন।তবে কি তাঁরা সরকারের উপর আস্থা হায়িরে ফেলছেন ? কারন সামনে ২০২১ এর বিধানসভার নির্বাচন।শাসক থেকে বিরোধী সব পক্ষই যুবকদের মন পেতে মরিয়া। এমতাবস্থায় চাকরিপ্রার্থীরা দ্বারস্থ হলেন শাসক বিরোধ নেতাদের কাছে।প্রার্থীরা বিরোধী নেতাদেরকে হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে সুজন চক্রবর্তী, অধীর চৌধুরী, বাবুল সুপ্রিয়, দিলীপ ঘোষ, জগন্নাথ সরকার- সহ ২০ জন জনপ্রতিনিধিদের কাছে তাদের দাবী জানান।যা শাসক দলের কাছে রীতিমতো অস্বস্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল দাবী।
শুক্রবার প্রশিক্ষিত প্রাথমিক TET উত্তীর্ণ প্রার্থী নদীয়ার পায়েল রায় ও জয়দেব নন্দী সহ প্রায় পাঁচ শতাধিক TET উত্তীর্ণ প্রার্থী “আমাদেরকে বাঁচান!” উল্লেখ করে রাজ্যের বিরোধী সাংসদের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের মাধ্যমে তাদের দাবি গুলি তুলে ধরেন।কি সেই দাবি?
প্রার্থীদের একাংশের মতে, ২০১৪ এর প্রাথমিক টেটে ব্যাপক দুর্ণীতির ফাঁস রুখতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নোটিফিকেশনে টেট পাশ সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন কিন্তু কোনো টেট পাশ সার্টিফিকেট দেননি যা NCTE – নিয়মেরও পরিপন্থী।পরবর্তী কালে প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী বাধ্য হয়ে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় এবং 08/04/2019 তারিখে কলকাতা হাইকোর্টে পিটিশনারদের পক্ষে রায় দিয়ে ২ মাসের মধ্যে পর্ষদকে টেট সার্টিফিকেট দেওয়ার নির্দেশ দিলেও পর্ষদ ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাবার জন্য ও সময় কাটানোর জন্য ডিভিশান বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করে মামলাটিকে ফেলে রেখে দিয়েছে। সরকারের এই অসহিষ্ণুতা মূলক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে বলে প্রশিক্ষত প্রার্থীদের একাংশের মত।তাই তারা এবার বাধ্য হয়ে বিরোধী সাংসদের শরণাপন্ন হলেন।
এই দিন TET উত্তীর্ণ ও প্রশিক্ষিত প্রার্থী ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে পায়েল রায় বলেন, “সংবাদমাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের পরেই নিয়োগে প্রশিক্ষণরতদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সেই অনুযায়ী ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৫-২০১৭ এই দুটি ব্যাচই প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ছিলো, কিন্তু সরকারী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পর্ষদ অর্ধপ্রশিক্ষিতদের নিয়োগে সুযোগ না দিয়ে প্রচুর অপ্রশিক্ষিত প্রার্থী নিয়োগ করেছে। পরবর্তীকালে একটা বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে ২০১৪-২০১৬ ব্যাচ ও RCI স্বীকৃত ২০১৫-২০১৭ ডি এড ব্যাচকে নিয়োগ পর্বের আওতায় আনা হলেও পর্ষদ বেআইনিভাবে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ অধীনস্থ ২০১৫-২০১৭ ব্যাচকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করেছে।” টেট উত্তীর্ণ ও প্রশিক্ষিত প্রার্থী ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে আর একজন প্রার্থী জয়দেব নন্দী বলেন, “বাইরের বোর্ড থেকে যারা ১৫-১৭ সেশনে ট্রেনিং করেছে পর্ষদ তাদেরকে চাকরি দিয়ে দিয়েছে অথচ পর্ষদ তার নিজের বোর্ডে থেকে যারা ওই একই সেশনে ট্রেনিং সম্পন্ন করেছে তাদেরকে সেই সুযোগ দেয় নি। ” পর্ষদের এই নিষ্ঠুর দ্বিমুখী নীতির প্রতিবাদ করেন ১৫-১৭ সেশনে প্রায় ৩০০ জন প্রশিক্ষিত টেট পাশ বঞ্চিত প্রার্থীরা । এতদিন এই প্রার্থীরা রাজ্য সরকারের কাছে তাদের দাবী গুলি বারবার তুলে ধরে ছিল। কিন্তু এবার প্রার্থীরা বিরোধী নেতাদের কাছে তাদের দাবী গুলি তুলে ধরায় তা শাসক শিবিরের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।তবে কি এই সরকারের প্রতি তাদের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে? তবে এখন দেখার বিষয় প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের দাবি সরকার মেনে নেয় কিনা।তবে সামনের ২০২১ এর বিধানসভার নির্বাচনে বেকার যুবকদের দীর্ঘদিনের বেকারত্বের জ্বালা ভোটবাক্সে কতটা প্রভাব পড়ে সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।
For Latest Update Follow Us on