প্রণব রায়ঃ- রাজীবলোচনের পর থেকে চতুর্থ অধঃস্তন পুরুষ পর্যন্ত ৫৩ জন ভাই ও ৪২ জন বোনের অনেকে বিদেশে থাকেন। কয়েকজন আইনজীবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে শিবনারায়ণের বৈমাত্রেয় ভাই যোগেন্দ্রচন্দ্র হুগলিতে ওকালতি করতেন। ১৮৮৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বইয়ের গোকুলদাস তেজপাল সংস্কৃতি কলেজে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা থেকে তিনি আমৃত্যু সকল অধিবেশনে যোগদান করেছেন। মেদিনীপুর জেলাবোর্ড ও পুরসভার সদস্যও ছিলেন।
যোগেন্দ্রচন্দ্রের দুই আইনজীবী পুত্রের মধ্যে কিশোরীপতি জেলা জজ কোর্টে ও সাতকড়িপতি হাইকোর্টে ওকালতি করতেন। মেদিনীপুর শহরের গোলকুয়াচকে তাঁদের বাড়িতে কংগ্রেস দলের বিভিন্ন কাজ হত। বাড়িটিকে বলা হত বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের অফিস। ১৯২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী মেদিনীপুর কলেজ মাঠে সভা করে এই বাড়িতে রাত্রিবাস করেন। ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, বীরেন্দ্রনাথ শাসমলও।
কিশোরীপতি ও সাতকড়িপতি ওকালতি ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সম্পাদকও হন কিশোরীপতি। এই পদে তিনি আজীবন ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনের ৩৭ হাজার কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবকের অধিনায়কত্ব করেন কিশোরীপতি। ১৯৩২ সালে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। আলিপুর জেলে চিত্তরঞ্জন দাশ, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, সুভাষচন্দ্র বসু, আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে ছিলেন তিনি।
১৯৩১ সালের ৭ এপ্রিল জেলাশাসক জেমস পেডি নিহত হলে বাংলার গভর্নর জন এন্ডারসন মেদিনীপুরে এক সভায় বলেন, ‘মেদিনীপুরের সন্ত্রাসবাদীরা মনে হচ্ছে আমাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে; তারা মেদিনীপুরে কোন ব্রিটিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জীবিত থাকতে দেবেন না। বেশ সরকার সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছে’। বিপ্লবীদের দমনে ব্রিটিশরা অত্যাচার শুরু করে। বিপ্লবীরাও প্রতিরোধ শুরু করলেন। তাঁদের দমন করতে সরকার মেদিনীপুরে ‘পিটুনি পুলিশ ক্যাম্প’ চালু করে।
মেদিনীপুর শহরের গোলকুয়াচকে কিশোরীপতির বাড়ির লোকজনদের উচ্ছেদ করে পুলিশ এই বাড়িতে ক্যাম্প বসায়। কিশোরীপতি স্ত্রী ও নাবালক পুত্রদের নিয়ে ঘরছাড়া হন। মেদিনীপুর শহরে এই পিটুনি পুলিশের খরচ জোগাতে বসে ‘পিটুনি কর’ (পিউনিটিভ ট্যাক্স)। ১২ জুন শহর থেকে ‘পিটুনি পুলিশ’ তুলে নেওয়া হয়। তারও এক বছর পরে বাড়ি ফেরত পান কিশোরীপতি। তমলুক, কাঁথি, মেদিনীপুর শহর ছাড়াও জেলার আরও বহু এলাকায় এই ক্যাম্প ও ট্যাক্স চালু হয়।
১৯৩৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর জেলাশাসক বার্জ নিহত হন। কিশোরীপতিদের মেদিনীপুরে থাকা নিষিদ্ধ হয়। তাঁরা চলে যান হাওড়ায়। এই মামলায় তাঁর নাবালক পুত্র সনাতনকে গ্রেফতার করে আন্দামান সেলুলার জেলে পাঠানো হয়। সেই সময়ে আন্দোলনকারী কয়েকজনকে ‘স্পেশ্যাল পুলিশ’ হিসাবে নিয়োগ করত ‘পিটুনি পুলিশ’। থানায় বা সরকারি অফিসে তাঁদের ‘ডিউটি’। কাজ নেই, বসার চেয়ারও নেই। সারাদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা।
কিশোরীপতি ১৯২৭-৩০ সাল পর্যন্ত মেদিনীপুর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে তখনকার ঘাটাল-ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে ঝাড়গ্রামের স্বনামধন্য রাজাকে পরাজিত করে তিনি নির্বাচিত হন। কিশোরপতি খুব তামাক খেতেন। তাই নির্বাচনে তাঁর প্রতীক ছিল হুকো। ১৯৪৩ সালে তিনি প্রয়াত হন।
সকল খবর সবার আগে ফেসবুকে ফ্রী পেতে চাইলে আমাদের পেজ লাইক করুন। Click Here..
সেই পুতুলটার কথা। কলমেঃ লেখিকা ও সমাজসেবী স্বাতী বোল।
For Latest Update Follow Us on