নিশিকান্ত ভূঞ্যাঃ- একদিকে করোনার প্রকোপের জন্য বিরোধীদের খোঁচা সামলাতে হচ্ছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অপরদিকে রাজ্যের গ্রামীণ সম্পদ কর্মী থেকে শুরু করে শিক্ষক চাকুরীপ্রার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হচ্ছে এবং পথে নেমে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমতাবস্থায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সংখ্যালঘুরা বিড়ম্বনার কারন হয়ে দাঁড়াতে চলেছে। এই মুহুর্তে প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছে রাজ্যের ২৩৫ টি আন-এডেড মাদ্রাসার ২৫০০ শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী বৃন্দ।
আরেকটু গভীরে গিয়ে খোঁজ নিলে বেরিয়ে আসে এক ভয়ঙ্কর তথ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি অনুমোদিত, কিন্তু এই অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পাঠরত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় না দুপুরের আহার বা মিড-ডে-মিল, পোশাক ও জুতো কিছুই না। এই উন্নত সংস্কৃতির যুগে যেটা অমানবিকতার পরিচয় বহন করে। আন-এডেড মাদ্রাসা গুলির সার্বিক চাহিদার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে “ওয়েষ্ট বেঙ্গল রিকগনাইজ্ড আন-এডেড মাদ্রাসা টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন(West Bengal Recognized Un-Aided Madrasa Teachers Association)“।
এই সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সেখ জাভেদ মিঁয়াদাদ বলেন, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ২০১১ সালে সংখ্যালঘুদের আধুনিক শিক্ষার প্রসারের জন্য ১০,০০০ মাদ্রাসা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় ২০১৩ সালে রাজ্যে মোট ২৩৫ টি আন-এডেড মাদ্রাসার অনুমোদন হয়, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি ২০১৩ সাল থেকে আজ অবধি আমরা বিনা বেতনে রয়েছি। আমরা এখনো পর্যন্ত নূন্যতম মাসিক বেতন পাচ্ছি না। আমরা সাংবিধানিক মতে ২০১৪ সাল থেকে আমাদের বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে কলকাতার রাজপথে ও বিকাশ ভবন চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভ ও অনশন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের মধ্যস্থতায় আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি তুলে নেওয়া হয়। প্রতিশ্রুতি,প্রতিশ্রুতিই রয়ে গেছে, কিন্তু তার কোন বাস্তবায়ন হয়নি। যত দিন গেছে আন-এডেড মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন কালের অতলে তলিয়ে গেছে, কিন্তু এই পাষাণ সরকারের হৃদয়ের এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। সবচাইতে দুঃখের বিষয় হলো দরিদ্র পরিবারের পড়ুয়ারা মিড-ডে-মিল ও পোশাক কিছুই পায় না। এমন কি SPQEM প্রকল্প থেকে ৩ জন শিক্ষকের যে সাম্মানিক দেওয়া হয়েছিলো, কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেটাও বন্ধ। বর্তমানে কর্মরত ২৫০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীবৃন্দ বিনা বেতনে অসহায় যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছে। আমরা সাংবিধানিক মতে আন্দোলন করলেও রাজ্য সরকার কোন গুরুত্ব দেয়নি বরং রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী শ্রীঃ পার্থ চ্যাটার্জি আমাদের শিক্ষকদের “রাস্তার শিক্ষক” বলে আক্ষা দেন, রাজ্যের আর এক পূর্ণ মন্ত্রী এবং সংখ্যালঘু মুখ মাননীয় ফিরহাদ হাকিম মহাশয় আমাদের এক শিক্ষককে পাগল বলে আখ্যা দেন।
সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শ্রীঃ পলাশ রম বলেন, রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উন্নত শিক্ষা প্রদানের অঙ্গীকার করে রাজ্যের ক্ষমতায় বসেছিল। কিন্তু সে অঙ্গীকার তারা ভুলে গিয়ে সংখ্যালঘুদের বিগত ৯ বছরে পরিকল্পিত ভাবে অন্ধকার জগতের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। বিগত সরকারের আমলেও সংখ্যালঘুরা এতটা অসহায় অবস্থার মধ্যে ছিলো না।শ্রীঃ পলাশ রম আরও বলেন, কিছুদিনের মধ্যেই আমরা এই অসহায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাসিক বেতনের দাবীতে নবান্ন অভিযানের ডাক দিতে চলেছি। আমরা সেই ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেই আন্দোলন হবে মরণপণ আন্দোলন, অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আন্দোলন । যতোক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষক – শিক্ষিকাদের বেতন ও ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যার সুষ্ঠভাবে সমাধান না হচ্ছে – ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে। সে আন্দোলন আরো তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করবে।
সকল খবর সবার আগে ফেসবুকে ফ্রী পেতে চাইলে আমাদের পেজ লাইক করুন। Click Here..
এখন দেখার বিষয় মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তাদের দাবী মেনে নেন কিনা। সামনে ২০২১ এর বিধানসভার নির্বাচন তাই এই” ওয়েষ্ট বেঙ্গল রিকগনাইজ্ড আন-এডেড মাদ্রাসা টিচার্স অসোসিয়েশন “এর দাবী না মানলে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে বেগ পেতে হবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। কারন এ রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট একটা বড় ফ্যাকটার।তাই ২০২১ এর বিধানসভার নির্বাচনের আগে তৃণমূল নেত্রী কি পদক্ষেপ নেন তার দিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের।