Untouchability in the village of Bengal

নিশিকান্ত ভূঞ্যাঃ- বাংলার গ্রামে এখনো অস্পৃশ্যতা বিরাজ করছে। তবে পূর্বের থেকে সেই অস্পৃশ্যের কঠোরতা অনেকটাই কম। আমি কিছু উদাহরণের সাহায্যে গ্রাম বাংলার অস্পৃশ্যতা যে এখনো রয়েছে তা আলোচনা করবো।

Untouchability in the village of Bengal

আমাদের গ্রামাঞ্চলে অস্পৃশ্যতা মূলতঃ নীচু জাতের প্রতি উঁচু জাতের বৈষম্য মূলত আচার আচরন । গ্রামে আর্থিক মানদণ্ডের সাহায্যে কোনো মানুষকে বিচার করা হয় না। বিচার করা হয় জাতের ভিত্তিতে। মূলত নীচু বর্ণের যেমন – আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ, এছাড়া জেলে,ধোপা,মুচি প্রভৃতি সরকারি ভাবে যারা S.T ও S.C সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত তাদের প্রতি জেনারেল কাস্ট অর্থাৎ কায়স্থ, মাহেশ্ব , ব্রাহ্মন প্রভৃতি জাতি গুলো সামাজিক বৈষম্যমূলক আচরণ করে থাকেন । অর্থাৎ ব্রাহ্মন,কায়স্থ, মাহেশ্ব বা জেনারেল কাস্টের মধ্যে অন্তর্গত মানুষরা S.T ও S.C মানুষদের নীচু চোখে দেখেন। উঁচু জাতের আচরণ থেকেই বোঝা যায় যে,তাঁরা নীচু জাতের প্রতি ঘৃণা বা বৈষম্য প্রকাশ করছেন।

Advertisement

আমি কিছু উদাহরণের সাহায্যে গ্রাম বাংলার অস্পৃশ্যতা যে এখনো রয়েছে তা আলোচনা করবো। তবে তার সাথে সাথে এও বলবো যে,পূর্বের তুলনায় এই অস্পৃশ্যতা অনেকটাই কমেছে। তার কারণ হিসাবে আমি মনে করি এক, নীচু জাতের মানুষরা আর্থিক দিক থেকে আগের থেকে অনেকটা স্বচ্ছল।


দুই, উচুঁ জাতের মানুষের সংকীর্ণ মানসিকতা অনেকটা কমেছে। তার কারন উঁচু জাতের মানুষজনরা উপলব্ধি করেছেন যে, নীচু জাতের অনেক মানুষ শিক্ষা দীক্ষায়, অর্থের দিক থেকে তাদের থেকে অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছেন।তাছাড়া প্রশাসনিক পদে নিচু জাতের লোকজন চাকুরী পাওয়ার ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীচু জাতের মানুষ জনের কাছে উচু শ্রেনীর মানুষকে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া উচুঁ জাতের মানুষের বিভিন্ন কারণে সংকীর্ণ মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে।

এখনো কিছু কিছু গ্রামে কোনো ব্রাহ্মন পরিবারে বা কোনো উঁচু জাতের পরিবারে কোনো নীচু শ্রেনীর মানুষকে খেতে দেওয়া হলে তখন সেই নীচু জাতের লোকটিকে খাওয়ার পর তার নিজের খাওয়ার থালা নিজেকেই পরিস্কার করতে হয় বা খাওয়ার পর ওই স্থানে পরিস্কার করার দায়িত্ব ওই নীচু জাতের লোকটির। এই ব্যাপারটা উচু জাতের লোকেরা করে থাকে।তবে ব্রাহ্মন সম্প্রদায়ের লোকেরা এটা বেশি করে থাকে এই ব্যাপারটা গ্রামের শতকরা ৯৯ ভাগের বেশি ব্রাহ্মন পরিবারে রয়েছে। অর্থাৎ যে কেউ অনুভব করতে পারবে যে, নীচু জাতের মানুষটির প্রতি বৈষম্য আচরন করা হচ্ছে।

গ্রামাঞ্চলে বিবাহের ক্ষেত্রে জাত পাত খুব মানা হয়।যেমন,উচু জাতের মানুষেরা উঁচু জাতের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।আবার নীচু জাত তাদের জাতের মধ্যে বিবাহ করে থাকে। তবে কোনো কারণে যদি কোনো উঁচু জাত নীচু জাতের সাথে বিবাহ বন্ধনে জড়িত হয় তখন বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে সেই উঁচু জাতের পরিবারকে বয়কট করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

যেমন – একটা ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। প্রায় চার বছর আগে আমাদের ব্রাহ্মন অর্থাৎ পুরোহিতের (যিনি আমাদের বাড়িতে সারা বছর ধরে বিভিন্ন পূজো করে থাকেন) ছেলে একজন S.C সম্প্রদায়ভুক্ত মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করে। বিয়ের খবরটা দাবানলের মতো গ্রামের পর গ্রাম ছড়িয়ে যায় এবং অনেক গুলো গ্রামে একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষত ওই পুরোহিত বা তার ছেলে যেসব গ্রাম গুলোতে পূজো করেন। প্রসঙ্গত এই পুরোহিতের ছেলে অন্য জাতির মেয়েকে বিয়ে করার জন্য এই পুরোহিতের জ্ঞাতি গোষ্ঠী অর্থাৎ যে ব্রাহ্মন পাড়ায় এই পুরোহিতের বসবাস সেখানকার ব্রাহ্মনরা মিলে এই পুরোহিতের পরিবারকে সামাজিক ভাবে কিছু দিন বয়কট করেন এবং এই পুরোহিত বিভিন্ন গ্রামে যেসব পরিবার গুলোতে পূজো করতেন তাদের মধ্যে অনেক পরিবার এই পুরোহিতকে পূজো করার কাজ থেকে বাদ দিয়ে দেন।তবে সব পরিবার নয়।এমনকি এই পুরোহিতের ছেলের প্রতি বিদ্রুপ মনোভাব প্রকাশ করার জন্য ছেলেটি পূজো করা বন্ধ করে দেন।এই ঘটনা প্রমান করে যে,গ্রামাঞ্চলে অস্পৃশ্যতা এখনো থেকে গেছে।

Advertisement

আর একটি বিষয় আমি উপস্থাপন করবো যার মধ্যে সমাজের উঁচু-জাতের লোকেরা যে নীচু জাতের লোকের প্রতি যে বৈষম্য মূলক আচরণ করে তা বোঝা যাবে।আমার জানা একটি গ্রামে S.C সম্প্রদায়ের পাশাপাশি ব্রাহ্মন ও অন্যান্য উচ্চ বর্ণের মানুষের বসবাস। সেই গ্রামে পানীয় জলের জন্য একটি টিউয়েল রয়েছে। এই টিউয়েল বা পানীয় জলের কলে পানীয় জল নিতে আসা উচ্চ বর্ণ ও নিম্নবর্ণের জাতির মধ্যে যে বৈষম্য তা চোখে পড়ার মতো।কোনো S.C সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবার পানীয় জল নেওয়ার পর যদি উচু বংশের মানুষ জল নেয় তাহলে পুরো পানীয় জলের কলটি বা টিউয়েলটি বারবার ভালো করে ধোয়ার পর জল নেয়। কিন্তু উচুজাতির মানুষ জল নেওয়ার পর যদি আর একজন উঁচুজাতের মানুষ জল নেয় তাহলে কিন্তু তাঁরা টিউয়েলটির জল দিয়ে ধোয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।তাছাড়া কোনো উচ্চবর্নের মহিলা জল আনতে গিয়ে যদি দেখেন যে নিচু জাতের মহিলা জল আনতে গিয়েছে তাহলে দূরত্ব বজায় রেখে তাঁরা দাঁড়ায়। যাতে করে গায়ে গা না লাগে। এ ঘটনা গুলো থেকেই স্বাভাবিক ভাবে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে গ্রামাঞ্চলে অস্পৃশ্যতা থেকে গেছে।

আরও একটি বিষয় আমি তুলে ধরবো যেটা বেশির ভাগ গ্রামে দেখা যায়। কোনো নিম্ন শ্রেনীর পরিবারের কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে উচ্চু জাতের মানুষজনকে খাওয়ার জন্য ডাকা হলে তাঁরা খেতে আসবে তখনই যদি ওই নিম্ন বর্নের পরিবারের সমস্ত কিছু খাওয়ার তৈরী থেকে পরিবেশন উচ্চু বর্নের মানুষ জন করে তবেই উঁচু-জাতের লোকেরা যাবে।নতুবা ওই নিম্ন বর্ণের বা নীচু জাতের পরিবারে কোনো উঁচু জাতের মানুষজন কেউ খওয়ার খাবে না।আবার নিচু জাতির মধ্যে কিছু জাতি যেমন হরিজন এদের বাড়ির কোনো অনুষ্ঠানে উঁচুবর্নের মানুষ জনকে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করলে কোনো উঁচু বর্নের মানুষজন যায় না।

গ্রামাঞ্চলে আর একটি বিষয় দেখা যায়।ব্রাহ্মণ বা বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষজন ঠাকুর বা ভগবানের মূর্তি বা প্রতিমা রাখেন এবং তা বিভিন্ন পরিবারের মানুষজন টাকার বিনিময়ে একদিন বা দুদিনের জন্য সেই ভগবানের মূর্তিকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পুজোর আয়োজন করেন।কিন্তু নিচু জাতের বাড়িতে পুজো করার জন্য ভগবানের মূর্তি দেওয়া হয় না।তার কারণ তাঁরা নিচু জাত।তাই স্বাভাবিক ভাবেই বলা যায় বাংলার গ্রামাঞ্চলে এখনো অস্পৃশ্যতা রয়েছে।

সকল খবর সবার আগে ফেসবুকে ফ্রী পেতে চাইলে আমাদের পেজ লাইক করুন। Click Here..

For Latest Update Follow Us on

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *